পলাশ রায়: হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় তীব্র মর্মাহত কবি নজরুল ১৯২৬ এর ২২ মে কৃষ্ণনগরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির বার্ষিক সম্মেলনে সবাইকে চমকে দিয়ে গেয়েছিলেন ‘হিন্দু না মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কাণ্ডারী বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার।’
অথবা গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান,/ যেখানে মিশেছে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রীস্টান।’
কিংবা ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান/নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি/ সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’ নজরুলের এই সৃষ্টি যুগে যুগে মনুষত্বের পথ দেখাবে।
যদিও কবিমাত্রই অসাম্প্রদায়িক, মানবতা, সুন্দর আর প্রেমের হওয়ার কথা। তবু কবিকূলে কাজী নজরুল ইসলাম অসাম্প্রদায়িক চেতনা আর মানবতায় পৃথিবীতে বিশেষ ভাবে স্মরনীয়।
দ্রোহের কবি হিসেবেও পরিচিত আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ এ কবির ১২০তম জন্মবার্ষিকী। মুক্তচিন্তার অনলাইন সংবাদপত্র ঝালকাঠি সময় মানবতার কবির জন্মদিনে শ্রদ্ধাবনত।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে কবি জন্মেছিলেন।সীমাহীন দু:খে বেড়ে ওঠায় তাঁর ডাক নাম ছিলো দুখু মিয়া। বাবা কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
এবছর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছ ‘ নজরুল-চেতনায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
খ্রিস্টিয় ১৯৭৬ সালে ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের বাংলা ১২ই ভাদ্র শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে শারিরিক বিদায় নেয় কবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় তাকে।
বাংলা সাহিত্যের নক্ষত্র এ ক্ষণজন্মা পুরুষ কাজী নজরুল ইসলাম ৪২ বছর বয়সে ১৯৪১ সালে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর জীবন্মৃত অবস্থায় জীবন কাটান। মাত্র বাইশ বছরে (১৯১৯-১৯৪১) সাহিত্য সৃষ্টি, সংগীত সৃষ্টি, সৈনিক জীবন, কবিতার জন্য কারাজীবন, অন্য ধর্মের নারীর সঙ্গে বিয়ে, সন্তানের অকাল মৃত্যু, বাঁধনহারা ছন্নছাড়া অনিশ্চিত জীবন-যাপন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক, সমাজতন্ত্র, বৈষ্ণব প্রভাব, ইসলামী সংগীতের সঙ্গে কৃষ্ণ-কালী-চৈতন্য দেব বর্ণনা, আরবী-ফারসি শব্দের ব্যবহার, উদার অসাম্প্রদায়িক মন-মানসিকতা ইত্যাদি সমাহারে বর্ণাঢ্য, দুঃসাহসী, আশ্চর্য ও রহস্যপূর্ণ কবির জীবন।
নজরুল তাঁর লেখনীতে যে সাম্যের ইঙ্গিত দিয়েছেন তা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবতা এবং সুবিচারের এষণায় তীক্ষ্ণ, তীর্য, উজ্জ্বল।
কেবল কলমেই নয় কবি নজরুল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অস্ত্রও হাতে নিয়েছেন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোললে বারবার জেল খেটেছেন তিনি।আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি এবং তার লেখা ছিলো প্রেরণা। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নজরুল এক মহান পথিকৃৎ।
(সম্পাদক/ঝাস)
Leave a Reply